আত্মহত্যা যেন নিত্য নৈমেত্তিক ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটে। প্রায় সব শ্রেণী পেশা আর বয়সের মানুষই ঝুকছে এই আত্মহত্যার দিকে! জীবনের প্রতি মায়া কি একেবারেই হারিয়ে ফেলেছে, একুশ শতকের অগ্রগামী মানুষেরা? যারা নেতৃত্ব দিবে দেশকে, যারা এগিয়ে নিয়ে যাবে তার আশে পাশের মানুষগুলোকে, অথচ তারাই নিমজ্জিত অন্ধকারে! কোন দিকে চলতে শুরু করেছি আমরা, এই অজানা পথের শেষ কি নেই?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-এর মতে প্রতি বছর সারা বিশ্বে যে সব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে তার মধ্যে আত্মহত্যা ত্রয়োদশতম প্রধান কারণ। কিশোর-কিশোরী আর যাদের বয়স পঁয়ত্রিশ বছরের নিচে, তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা। নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার অনেক বেশি। পুরুষের আত্মহত্যা করার প্রবণতা নারীদের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ। বিশ্বে প্রতিবছর ৪০ সেকেন্ডে কোথাও না কোথাও আত্মহত্যা করে থাকে। প্রতিবছর পৃথিবীতে দশ লাখেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে নিজের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে। এছাড়াও অগণিত মানুষ প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি আমরা যদি দেখি ভিকারুন্নেসা স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী অরিত্রী, চট্টগ্রামের ডঃ আকাশ, মেহেরপুরের মুসলিমা খাতুন নামে এক গৃহবধূ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সৌমিক মিত্র সবুজ গলায় ফাঁস দিয়ে মারা যায় এইরকম নাম না জানা অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে এবং কি দুইদিন আগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী জারিন দিয়া সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় ক্ষোভে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
বাংলাদেশে আত্মহত্যা খুবই উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষকরা মনে করছেন; “২০২০ সালের মধ্যে এই প্রবণতা ১৫ থেকে ২০ গুণ বাড়বে। আমাদের দেশে প্রতিদিন প্রায় গড়ে ২৪ জন আত্মহত্যা করে এবং বছরে ১০ হাজার বা তারও বেশি আত্মহত্যা করে। কেউ কেউ মনে করছে আত্মহত্যার হার অঞ্চলভেদে কম বেশি হয়। অঞ্চলের হিসাব করলে ঝিনাইদহ এই তালিকায় সবচেয়ে উপরে থাকে। ঝিনাইদহ প্রতি বছর গড়ে ৩০০ এর বেশি আত্মহত্যা করে এবং দুই হাজারেরও বেশি আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এছাড়াও শহরের চেয়ে গ্রামে আত্মহত্যা প্রবণতা ১৭ গুণ বেশি।”
আত্মহত্যা মানে নিজেকে নিজে ধ্বংস করা, নিজ আত্মাকে চরম কষ্ট ও যত্ননা দেওয়া। আসুন নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংস না করে সমাধানের পথ খুঁজি। প্রথমে আত্মহত্যার পিছনের কারণ গুলো খুঁজে বের করা উচিত। আমরা এর পিছনের কারণ খুঁজলে দেখতে পাবো- কোনো কিছু নিয়ে চরম হতাশা, চাকরি না পাওয়া, স্বামী বা স্ত্রীর প্রতারণা, যৌতুক সমস্যা, পারিবারিক অশান্তি, মানসিক অশান্তি, বখাটেদের উৎপাত, প্রেমে ছ্যাকা খাওয়া ইত্যাদি কারণ গুলো খুঁজে পাই। কিন্তু এইসব থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র পথ আত্মহত্যা নয়।
পৃথিবীতে প্রত্যেক সমস্যারই সমাধান আছে তেমনি আত্মহত্যা না করে এইসব সমস্যা থেকে বাঁচারও সমাধান আছে। আত্মহত্যা থেকে বাঁচাতে এই রাষ্ট্রকে, এই সমাজকে প্রদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা যদি একটা বেকার যুবককে তার বেকারত্বের জন্য পীড়া না দিয়ে তাকে যদি সান্তনা দিই, তার পাশে থাকি এবং তাকে অন্য একটা পথ খুঁজে দিই তাহলে ভিন্ন কিছু হতো। বিভিন্ন দেশে হতাশা থেকে বাঁচার জন্য শিক্ষার্থীদের, যুবক-যুবতীদের জন্য সেমিনারের আয়োজন করা হয় তাদেরকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখানো হয় আমাদের দেশেও তা করা উচিত। অন্যায় কুসংস্কার এর কারণে কেউ যাতে আত্মহত্যা করতে না হয় সে জন্য আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত, পাশাপাশি নির্যাতিতদের পাশে থেকে তাদের সান্তনা এবং এবং বুঝানো উচিত দুনিয়াটা তাদের জন্য শেষ নয় অনেক কিছু বাকি আছে। নৈতিক শিক্ষার উপর সেমিনার করা উচিত আত্মহত্যা মহাপাপ এবং তার শাস্তি জাহান্নাম অর্থাৎ নিজেকে ধ্বংস করার পর আবার আখেরাতে শাস্তি সে সম্পর্কে তাদের উপলব্ধি করানো উচিত। আমরা যদি এইভাবে সমস্যার সমাধান খুঁজি এবং সমাজ ও রাষ্ট্র পাশে থাকে তাহলে আত্মহত্যা রোধ করা সম্ভব হবে।
পৃথিবী টা অনেক সুন্দর। সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের সে পথ গুলোকে খুঁজে বের করা উচিত শুধু শুধু নিজেকে ধ্বংস করা মোটেও উচিত নয়। আসুন সুন্দর পথ খুঁজি নিজেকে বাঁচিয়ে রাখি এবং দেশের উন্নতিতে অবধান রাখি।
আমজাদ হোসাইন হৃদয়
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়