একটি দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তার পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।।পুলিশ চাইলেই সবধরনের অন্যায় অত্যাচার বন্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিয়ে তা নিয়ন্ত্রনে আনতে পারে। বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশের প্রধান অসামরিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। সংস্থাটি বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। বাংলাদেশ পুলিশে পুরুষ, নারী উভয়ই চাকুরি করছে।
শান্তি, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও প্রগতি এই স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পুলিশ দেশ সেবার মনোভাব নিয়ে জনগণের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করে যাচ্ছে সারা দেশে। চুরি-ডাকাতি রোধ, ছিনতাই প্রতিরোধ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ইত্যাদি সমাজ বিরোধী কর্মকান্ড প্রতিরোধসহ বিভিন্ন জনসভা, নির্বাচনী দায়িত্বে বাংলাদেশ পুলিশ অংশগ্রহণ করে থাকে।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনি “শৃঙ্খলা নিরাপত্তা প্রগতি ” এই স্লোগানে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে চলছে। একসময় বলা হতো পুলিশ জনগনের বন্ধু। মানুষ অন্যায়ের স্বীকার হলে পুলিশের কাছে যেত, যে কোন অন্যায়ের প্রতিকারে তাদের সহযোগিতা কামনা করতো। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে রক্ষকই যখন ভক্ষক হয়ে দাড়ায় তখন মানুষ যাবে কোথায়?
সম্প্রতি সারাদেশে পুলিশি নির্যাতন, বিচারহীনতা ও অদূরদর্শিতা নিয়ে ভাবমূর্তি সঙ্কটে রয়েছে পুলিশ প্রশাসন। টেকনাফের ওসি প্রদীপ কিংবা সিলেটের এস আই আকবর সহ ছোট বড় এমন অনেককে নিয়েই এখন ভাবমূর্তি সঙ্কটে পড়ছে পুলিশ। সাধারন জনগন পুলিশকে বন্ধু ভাবার বদলে তাদের নিয়ে থাকছে আলাদা আতঙ্কে। গায়েবী মামলা,তুলে নিয়ে অর্থ দাবি করা, অনায্য সুবিধা দেওয়া সহ নানা বেআইনি কর্মকান্ডে জড়িত। এমন অবস্থা চলতে থাকলে দেশের আইনশৃংখলার চরম বিপর্যয় ঘটবে এবং একসময় তা হাতের নাগালের বাহিরে চলে যাবে।
একজন দুজন কর্মকর্তার দায় পুরো প্রশাসন নেওযার যেমন প্রশ্ন আসেনা তেমনি পুলিশকে এই ভাবমূর্তি ফেরাতে আরো জনবান্ধব কর্মসূচি নিতে হবে। জনগনের কাছাকাছি আসতে হবে। সেক্ষেত্রে বেশ কিছু জায়গায় উল্লেখযোগ্য কাজ করছে। তা ছড়িয়ে দিতে হবে সারা দেশে। পুলিশের স্লোগানের প্রগতি আনতে হলে তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে পুলিশকে আরো বেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট বিভিন্ন সময় জনসাধারনের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিলেও পুলিশের মেইন পেইজ,বা বিভিন্ন থানা হতে পরিচালিত পেইজ বা আইডি হতে জবাব দেওয়া হয়না বললেই চলে বরং কেবল নিজেদের কিছু কার্যক্রমেই সীমাবদ্ধ । উন্নত বিশ্বে নাগরিকের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেকোন প্রশ্নের জবাবে উত্তর দিয়ে থাকে পুলিশ। এতে সেবা খুব সহজে ও দ্রুত গতিতে পাওয়া যায়।
সম্প্রতি ঢাকার কিছু ট্রাফিক পয়েন্টে পুলিশর বডি ওর্ন ক্যামেরা বা বডি ক্যাম যুক্ত হয়েছে যা দিয়ে সুফল ও পাচ্ছে। কিন্তু নিয়মিত পুলিশ বাহিনীতে এই প্রযুক্তি যুক্তের মাধ্যমে পুলিশের মটো প্রগতি আরো একধাপ এগিয়ব যাবে। উন্নত বিশ্বের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি তাকালে দেখতে পাই পুলিশের বডিক্যাম অনেক তথ্য দিতে সাহায্য করছে। এক্ষেত্রে পুলিশের বক্তব্য এবং অভিযুক্তের বক্তব্য যাচাই-বাছাই করা যায়। কিন্তু বেশ কয়েকবছর আগে এ নিয়ে কথা হলেও আর সামনে এগোয়নি। এ মূহর্তে ভাবমূর্তি ফেরাতে সবচেয়ে বেশী কার্যকর ভূমিকা রাখবে। সাধারন মানুষ যদি অন্যায়ের স্বীকার ও হয় তবে এর প্রতিকার খুব সহজেই পাবে। এ বিষয়টি চালু হলে অনেক কথিত বন্দুক যুদ্ধ হতে পর্দা উঠবে,প্রশ্ন কমবে,দোষীরা বিচারের আওতায় আসবে।
পুলিশের ক্ষেত্রে আরেকটি বড় সমস্যা দেখা যায় থানার দালাল। নারায়ণগঞ্জ রেঞ্জের শেরপুর সদর থানায় ডিজিটাল কিউ সিস্টেম চালু করেছে। সেবা পেতে এখন একটা নির্ধারিত নিয়মেে অধীনে দ্রুততার সহিত সেবা পাবে। এই সহজ বিষয়টি সারাদেশেই বাস্তবায়ন করা যায় সদিচ্ছা হলেই।
আজ যদি ওসি প্রদীপের কিংবা এস আই আকবর এর বডিক্যাম থাকতো তবে এতো বিতর্ক তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকতো না। পাশাপাশি সত্যিকারের অন্যায়ের খুব সহজেই বিচার ও হতো। সারাদেশে পুলিশের নামে যে অভিযোগ উঠছে তা খুব দ্রুতই সমাধান করা যেত ও ভাবমূর্তি সঙ্কট কাটিয়ে উঠা সম্ভব। স্বচ্ছতা জবাবদিহিতাই পারে পুলিশকে জনগনের বন্ধু হিসেবে গড়ে তুলতে।
শিক্ষার্থী,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
babir838@gmail.com