স্টাফ রিপোর্টার, নাছির উদ্দিন আবির:
“নদী-চর, খাল-বিল, গজারির বন, টাঙ্গাইল শাড়ি তার গর্বের ধন” আজ ঐতিহ্যবাহী ‘টাঙ্গাইল’ এর ১৫০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। আজ থেকে ১৪৯ বছর আগে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ নভেম্বর ‘আটিয়া’ থেকে মহকুমা সদর দপ্তর টাঙ্গাইলে স্থানান্তর করা হয়। মূলত: ওই সময়টাকেই ‘টাঙ্গাইল’- এর প্রতিষ্ঠাকাল বা জন্মদিন হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
টাঙ্গাইল জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত যা ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এর জনসংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ এবং আয়তন ৩৪১৪.৩৫ বর্গ কিলোমিটার। টাঙ্গাইল আয়তনের ভিত্তিতে ঢাকা বিভাগের সর্ববৃহৎ এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে ২য় সর্ববৃহৎ জেলা। টাঙ্গাইল জেলার পূর্বে রয়েছে ময়মনসিংহ ও গাজীপুর জেলা, পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ, উত্তরে জামালপুর, দক্ষিণে ঢাকা ও মানিকগঞ্জ জেলা। টাঙ্গাইল জেলায় মোট উপজেলার সংখ্যা ১২ এবং মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১১০ টি।
১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টাঙ্গাইল ছিলো বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার একটি মহকুমা; ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। টাঙ্গাইল অঞ্চলটি একটি নদী বিধৌত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। এই জেলা যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এবং এর মাঝ দিয়ে লৌহজং নদী প্রবাহমান।
টাঙ্গাইলের নামকরণ বিষয়ে বহু জনশ্রুতি ও নানা মতামত রয়েছে। ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত রেনেল তাঁর মানচিত্রে এ সম্পূর্ণ অঞ্চলকেই আটিয়া বলে দেখিয়েছেন। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের আগে টাঙ্গাইল নামে কোনো স্বতন্ত্র স্থানের পরিচয় পাওয়া যায় না। টাঙ্গাইল নামটি পরিচিতি লাভ করে ১৫ নভেম্বর ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে মহকুমা সদর দপ্তর আটিয়া থেকে টাঙ্গাইলে স্থানান্তরের সময় থেকে।
ইতিহাস প্রণেতা খন্দকার আব্দুর রহিম সাহেবের ‘টাঙ্গাইলের ইতিহাস’ গ্রন্থে, ইংরেজ আমলে এদেশের লোকেরা উচু শব্দের পরিবর্তে ‘টান’ শব্দই ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিল বেশি। এখনো টাঙ্গাইল অঞ্চলে টান শব্দের প্রচলন আছে। এই টানের সাথে আইল শব্দটি যুক্ত হয়ে হয়েছিল টান আইল। আর সেই টান আইলটি রূপান্তরিত হয়েছে টাঙ্গাইল।
টাঙ্গাইলের নামকরণ নিয়ে আরো বিভিন্নজনে বিভিন্ন সময়ে নানা মত প্রকাশ করেছেন।
কারো মতে, নবাব মুর্শিদকুলী জাফর খাঁর আমলে টাঙ্গাইল ছিল কাগমারী পরগনার অন্তর্গত। জমিদার ইনায়াতুল্লাহ খাঁ লৌহজং নদীর টানের (উঁচু) আইল দিয়ে যে পথে ক্রোশখানেক পশ্চিম-দক্ষিণে খুশনুদপুর কাছারিতে যাতায়াত করতেন সেই ‘টানের আইল’ শব্দটি উচ্চারিত হতে হতে ‘টান-আইল’ এবং পরে রূপান্তরিত হয়ে ‘টাঙ্গাইল’ হয়।
◑ টাঙ্গাইলে বিখ্যাত: টাঙ্গাইলের শাড়ী এবং পোড়াবাড়ির চমচমের জন্য সারা দেশব্যাপী খ্যাত।
◑ টাঙ্গাইল জেলার দর্শনীয় স্থান:
গোপালপুর ২০১ গম্বুজ মাসজিদ, আতিয়া মসজিদ, মধুপুর জাতীয় উদ্যান, রাবার বাগান, যমুনা বহুমুখী সেতু, আদম কাশ্মিরী (রঃ) এর মাজার, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মাজার, পরীর দালান, খামারপাড়া মসজিদ ও মাজার, ঘাটাইলের পাকুটিয়া আশ্রম, মির্জাপুর ভারতেশ্বরী হোমস, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, পাকুল্লা মসজিদ, নাগরপুর চৌধুরীবাড়ী, উপেন্দ্র সরোবর, গয়হাটার মঠ, তেবাড়িয়া জামে মসজিদ, এলেঙ্গা রিসোর্ট, যমুনা রিসোর্ট, কাদিমহামজানি মসজিদ, ঐতিহ্যবাহী চমচমের জন্য খ্যাত পোড়াবাড়ি, করটিয়া সা’দত কলেজ, কুমুদিনী সরকারি কলেজ, ভূঞাপুরের নীলকুঠি, শিয়ালকোল বন্দর, ধনবাড়ী মসজিদ ও ধনবাড়ী নবাব প্যালেস, নথখোলা স্মৃতিসৌধ, বাসুলিয়া, রায়বাড়ী, কোকিলা পাবর স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, ঘাটাইল ধলাপাড়া চৌধুরীবাড়ী, মহেরা জমিদার বাড়ি, রাধা কালাচাঁদ মন্দির, পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী, বনগ্রাম গনকবর, স্বপ্ন বিলাস (চিড়িয়াখানা), মোকনা জমিদার বাড়ী, তিনশত বিঘা চর সখীপুর, বায়তুন নূর জামে মসজিদ, অলোয়া তারিণী জামে মসজিদ, দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি, নাগরপুর জমিদার বাড়ি, এলাসিনের ধলেশ্বরী ব্রীজ, টাঙ্গাইল শহরে অবস্থিত ডিসি লেক, সোল পার্ক, ইত্যাদি ইত্যাদি।
◑ টাঙ্গাইল জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব:
– সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী
– আবদুল হামিদ খান ভাসানী
– অমৃতলাল সরকার
– প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ
– দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহা
– বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী
– বেগম ফজিলতুন্নেসা জোহা
– সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী
– প্রতুল চন্দ্র সরকার
– শামসুল হক
– কানাইলাল নিয়োগী
– প্রতিভা মুৎসুদ্দি
– রফিক আজাদ
– বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম
– মামুনুর রশীদ
– রানী দিনমনি
– লায়ন নজরুল ইসলাম
– অধ্যক্ষ বন্দে আলী মিয়া
– ভবানী প্রসাদ
– বঙ্কিম চন্দ্র সেন
– মান্না (জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা)
– ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
◑ উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ:
– মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
– শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ
– সরকারি সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
– কুমুদিনী সরকারি মহিলা কলেজ
– মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ
– সরকারি মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ
– টাঙ্গাইল আলিয়া কামিল মাদরাসা
– রাবেয়া বসরী মহিলা মাদরাসা
– কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ
– বিন্দুবাসিনী সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়
– বিন্দুবাসিনী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
– মধুপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়
– অন্যান্য
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া।