আজ ২৫ শে বৈশাখ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৯ তম জন্মজয়ন্তী।বাংলা মাসের এই তারিখ(২৫ শে বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দ) জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমন একজন ব্যক্তিত্ব যাকে নিয়ে বললে বলা শেষ হবে না। সাহিত্যের সকল শাখায় ছিল তার সমান পদচারণ। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লিখা শুরু করে।মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৮৭৪ সালে তত্ববোধিনী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়।এরপর থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিগুরু হওয়ার যাত্রা শুরু হয়। রবীন্দ্রনাথ গুরুদেব, কবিগুরু, বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ৮০ বছর বয়সে ৫২ টি কাব্যগ্রন্থ, ৯৫ টি ছোটগল্প, ৩৮ টি নাটক, ১৩ টি উপন্যাস, ৩৬ টি প্রবন্ধ, ১৯১৫ টি গান রচনা করেছেন। তার যাবতীয় পত্রসাহিত্য ১৯ টি খন্ডে চিঠিপত্রে চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। তার রচনার মধ্যে ফুটে উঠেছে তৎকালীন সমাজব্যবস্থা, সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের অনুভূতি, বিষন্নতা, প্রেম -ভালবাসা, আনন্দ,অন্যায়ের প্রতিবাদ,সাহস ইত্যাদি।তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ সমূহ -সোনার তরী,
চিত্রা, ক্ষণিকা, মানসী,খেয়া প্রভৃতি।
১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ। এই গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে নোবেল পুরষ্কার পান। সর্বপ্রথম বাঙালি হিসেবে সাহিত্যে নোবেল জয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবিতার প্রতি ছিল তার গভীর ভালোবাসা। এই ভালবাসার রেশ ধরে মৃত্যুর ৮ দিন আগেও মৌখিকভাবে রচনা করেছেন তার জীবনেেে শেষ কবিতা -“তোমার সৃষ্টির পথ”। ছোটগল্প রচনায় তার অবদান কিন্তু কম নয়। তার বিখ্যাত ছোটগল্প গুলো হচ্ছ -নষ্টনীড় ,হৈমন্তী, মুসলমানির গল্প , কাবুলিওয়ালা ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য হবে ‘শেষ হইয়াও হইলো না শেষ।’যে গল্প পড়ার পর পাঠকের মনে রেশ থেকে যাবে।এমন অসাধারণ চিন্তার অধিকারী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ রবীন্দ্রনাথের জন্মের ১৫৯ বছর পর ও তার সৃষ্টিকর্ম পাঠকদের কাছে যথেষ্ট আবেদনময়ী।রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস পাঠকদের কাছে অনন্যদৃষ্টান্ত। তার উপন্যাসে ফুটে উঠেছে সামাজিক বিষয়গুলো, সেইসাথে ফুটে উঠেছে মিলনাত্মক, বিয়োগান্ত। রবীন্দ্রনাথের পাঠক সমাদৃত উপন্যাসগুলো হলো-চোখের বালি গোরা, নৌকাডুবি,ঘরে বাইরে,শেষের কবিতা প্রভৃতি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পদচারণাা রয়েছে নাটকেও।১৬ বছর বয়সে পারিবারিক নাট্যমঞ্চে অভিনয় শুরু করে। গীতিনাট্য,প্রহসন, নৃত্যনাট্য,কাব্যনাট্য রচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । তিনি ১৯১৫ টি গান রচনা করেছেন যা আজও আমাদের কাছে পরিচিত।
রবীন্দ্রনাথের লেখা আমার সোনার বাংলা , আমি তোমায় ভালবাসি আমাদের জাতীয় সংগীত।আজও সুখে-দুখে, উল্লাসে, নিভৃত নিশিতে আমার রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে যায়। পহেলা বৈশাখ বা বসন্তকে বরণ করি কবিগুরুর গানের মাধ্যমে।আরেকটি অঙ্গনে কবিগুরুর অবদান রয়েছে। যে অবদানের কথা না বললেই নয় আর তা হলো চিত্রকলা। ৭০ বছর বয়সে ছবিআঁকা শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। প্রায় ২ হাজার ছবি এঁকেছেন তিনি। কবিগুরুর আরেকটি পরিচয় আছে তিনি আধ্যাত্নিক কবিও ছিলেন। মানবতার কবিও ছিলেন।
শান্তিনিকেতনে যখন ইনফ্লুয়েঞ্জা আঘাত হানে তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তা জানা যায় রবীন্দ্রনাথের রাণুকে লেখা চিঠি থেকে। সীতা দেবীর লেখা থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাকি নিজে ঘুরে ঘুরে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখতে যেতেন। শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতেন। অসুস্থ শিক্ষর্থীদের জন্য তিনি নাকি প্রতিষেধক ও তৈরি করেছিলেন যার নাম ছিল “পঞ্চতিক্ত পাঁচন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহামারির সময় নেওয়া পদক্ষেপ আমাদের করোনা পরিস্থিতিতে মনে সাহস যোগাবে। নতুনভাবে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দিবে।
প্রতিবছর বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে উদযাপিত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী।এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনা ভাইরাসের কারণে বড় পরিসরে উদযাপিত করা যাচ্ছে না জন্মজয়ন্তী।তবে শীঘ্রই আমারা করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠব এই প্রত্যাশাই কামনা করি। কবিগুরুর ভাষায় বলতে হয়-
“মহাবিশ্ব জীবনের তরঙ্গেতে নাচিতে নাচিতে
নির্ভয়ে ছুটিতে হবে,সত্যের করিয়া ধ্রুবতার।”
খন্দকার নাঈমা আক্তার নুন
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।