বলতে গেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলেছিলো গনতন্ত্র। শুধু তাই নয় নব্বই এর আন্দোলন সেটাও ছিলো গনতন্ত্র উদ্ধারের জন্য। কিন্তু বাংলাদেশে বড় বড় রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে প্রতিশোধ নেয়ার প্রবনতা, কাউকে ছাড় না দেয়া প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দেবার মানসিতা, এসবের ফলে গনতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়েছিলো বার বার।
ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় অপরাধ করে পার পাওয়া বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরেই এক ধরনের সংস্কৃতিতে পরিনত হয়েছে। সেটা শুধু যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তা নাও, বরং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে এই অপরাধ প্রবনতা। আর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতার ফলে অপরাধ প্রবনতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। যেটা গ্রহন করার মতো নয়। নেতারা তাদের স্বার্থহাসিলের জন্য অপরাধীদেরকে বার বার ছাড় পাইয়ে দিচ্ছে। যেটা একধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছে, এবং সামাজিক অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলছে। প্রমানস্বরুপ, কয়েক মাস আগেও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ এ ধর্ষন মামলার আসামিকে জেলে হাসিমুখে দেখে মানুষের মাঝে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে তার পিছনে নিশ্চয় কোনো না কোনো অদৃশ্য শক্তি আছে, যেটা তাকে মুক্ত করবে। দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতার ফলে কিছু অসৎ লোক সমাজে এমন হীনভাবে চেপে বসেছে যাদের টনক নাড়ানো অসম্ভম বললেই চলে। তারা তাদের ইচ্ছামতো সমাজকে পরিচালনা করছে তাদের অসৎ উপায়ে।
যাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো সাহস করতে পারে না কেউ। অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়ায় ও তারা এসব করে যাচ্ছে। যার ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি মানুষের যে আস্থার জায়গা, তা মোটেও নেই। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নিতে গেলে উল্টো বিপদে পড়তে হয়। কথায় তো আছে- বাঘে ছুঁলে ১৮ ঘা আর পুলিশে ছুঁলে ৩৬ ঘা। ফলে সমাজের মানুষ অসহায়ের মতো তাদের অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছে।
অধিকাংশ জায়গায় নেতারা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কর্মীদের হাতে তুলে দিচ্ছে অবৈধ সব অস্ত্র। ফলে তারা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে এই অস্ত্রের ঝনঝানানি দিয়ে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে, গ্রুপিংয়ে। সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য মোবাইলকে সকলে দায়ী করলেও, আমার কেন জানি মনে হয় মোবাইলের চেয়ে সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য বেশি দায়ী সমাজের কিংবা রাষ্ট্রের অসৎ নেতারা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন- আমরা জনগনের ক্ষমতা তাদের হাতে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বাস্তব প্রেক্ষাপট তার পুরাই ভিন্ন। উল্টো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতার ফলে ক্ষমতা গুটিকয়েক লোকের মাঝে কুক্ষিগত হয়ে আছে।
যার থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় সেটা নিয়ে আজ জনমনে উদ্বেগ থাকলেও কেউ প্রকাশ করতে চায় না, বা প্রকাশ করার মাধ্যম খুজে পাচ্ছে না। কারন কুক্ষিগত ক্ষমতার ফলে বাকস্বাধীনতা হরন হয়েছে সে কবেই। তবে আমার মতে সরকারের উচিত সমাজ দেশ রাষ্টকে কুক্ষিগত ক্ষমতা থেকে বাচাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। যাতে করে সমাজে সচ্ছ্বতা ফিরে আসে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি হ্রাস পায়। সর্বোপরি সমাজের সকলে যাতে একই কাতারে মিলে মিশে বসবাস করতে পারে তার নিশ্চয়তা প্রধান করা।
শিক্ষার্থী
ভাষাবিজ্ঞান বিজ্ঞান বিভাগ
চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়